ঘুম থেকে তুলে বলে একটু বাইরে বের হব চল, মেয়েটা ঘুমঘুম চোখে অবাক হয়। এতরাতে কোথায় যাবে মা? জিজ্ঞেস করতে থাকে।
বাবা-মা কোন প্রকার উত্তর না দিয়েই বাইরে যাওয়ার জন্য বের হয়ে যায়। যেহেতু বাবা-মা বলছে তাই মেয়েটা আর নিষেধ করে নাই। চোখে ঘুম আর কৌতূহল নিয়েই বের হয় তাদের সাথে, কিছুদূর যাওয়ার পরই মেয়েটা লক্ষ্য করে তার চাচি শাহিনা বেগমও তাদের সাথে যাচ্ছেন। মেয়েটা মনে করেছিল হয়তো সবাই একসাথে কোন দরকারি কাজে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই মেয়েটা খেয়াল করে তার বাবা-মা নিজের বাড়ির রাস্তা রেখে কৃষি জমির দিকে যাচ্ছে, মেয়েটা অবাক হয়েই জানতে চেয়েছিলেএত রাতে তারা এখানে কেন এসেছে। মেয়েটার চোখে মুখে তখনও ঘুমঘুম ভাব ছিল, কিছুক্ষণ পরই তারা একটা ভুট্টা ক্ষেতের কাছাকাছি আসে। মেয়েটা এইবার তো আরো অবাক হয়ে যায়, এখানে এসেও কৌতূহলী হয়ে বাবা-মা আর চাচিকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল তারা এত রাতে এখানে কেন এসেছে, কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে জান্নাতির হাত এবং মুখ জাপটে ধরে, যাতে চিৎকার করতে না পারে। তারপর মাথায় এবং শরীরে রড দিয়ে জোরে আঘাত করে, মেয়েটা ছুটে দৌড় দিতে চেয়েছিল কিন্তু আকস্মিক আঘাতের কারণে আর মেয়েটার পা চলে না,হোচট খেয়েই পড়ে যায়, তারপর বাবা-মা এবং চাচি শাহিনা বেগম মিলে ধারালো দা দিয়ে কোপাতে কোপাতে রক্তাক্ত করে ফেলে মেয়েটাকে।
মেয়েটা তখন অনেকটাই নিস্তেজ, তীব্র যন্ত্রণায় গোঙ্গাচ্ছিল শুধু, তিনজন মিলে অনবরত কোপাতে থাকে মেয়েটাকে, চারদিকে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর সেখানেই মারা যায় মেয়েটা। পূর্ব পরিকল্পনায় জের ধরে বাবা-মা এবং চাচি মিলে মেয়েটাকে মেরে ওই ভুট্টা খেতেই রেখে চলে আসে। এ ঘটনা শনিবারের, পরদিন সকালে স্থানীয় কৃষকেরা যখন জমিতে কাজ করতে যায় তখন সেখানে মেয়টার লাশ দেখতে পায়, লাশ দেখতে পেয়ে খোঁজ দেয় বাবা-মা ও আরো এলাকবাসীকে। বাবা-মা কতক্ষণ কান্নাকাটির নাটক করে যাতে কেউ বুঝতে না পারে, তারপর মেয়ের চাচা এবং বাবা-মা মিলে প্রতিবেশী ২৭ জনের নামে মামলা করে। তারপর পুলিশ তাৎক্ষণিক সেই প্রতিবেশীদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, কিন্তু পুলিশ কিছুতেই সুরাহা করতে পারছিল না, সবাই অস্বীকার করছিল, পুলিশ আরও জোর দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিন্তু কাজ হয় না। এর দুইদিন পর পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত করে কিছু প্রামান পায়। সেই প্রমান ধরে পুলিশ মেয়েটার বাবা-মা এবং চাচা চাচিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে থানায় নিয়ে আসে, তারা থানায় এসেই ওই প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে থাকে এবং তাদেরকে ফাঁসি দিতে বলে। বাবা-মা বারবার বলতে থাকে আমার মেয়েটাকে ওই প্রতিবেশীরাই মিলে মেরেছে।
কিন্তু পুলিশ সেই কথায় পাত্তা না দিয়ে তাদের স্বাভাবিক ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যেতে শুরু করে। একপর্যায়ে যখন জোরালো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে এবং প্রমান গুলো সামনে নিয়ে আসে তখন চাচি শাহিনা বেগম পুলিশের কাছে স্বীকার করে ফেলে যে তারাই মেয়েটাকে শনিবার রাতে মেরেছে, বাবা-মা তখনও স্বীকার করতেছিলো না, কিন্তু চাচি শাহিনা বেগমের স্বীকারোক্তির পর বাবা-মা ও বুঝে যায় বাঁচার আর কোন উপায় নেই। তারপর মেয়েটার বাবা জাহিদুল ইসলাম এবং মা মোর্শেদা বেগমও স্বীকার করে যে তারা তিনজন মিলেই মেয়েটাকে নির্মমভাবে মেরেছে, তারপর মারার কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা জানায়- প্রতিপক্ষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই তারা নিজ মেয়েকে মেরেছে। প্রতিবেশীদের সাথে তাদের একটা ৩২ বিঘা জমি নিয়ে বেজাল চলছিল বহুদিন ধরেই। তাই চাচি শাহিনা বেগম তাদেরকে প্ল্যান দেয় এবং সেই প্ল্যান মোতাবেক নিজ মেয়েকে মেরে ওই জমিতে রেখে প্রতিবেশীর জমতে রেখে আসে। তারপর তারা মামলা করে প্রতিবেশীদের নামে, এতে করে মামলায় প্রতিবেশীদের জেল হলে তারা সহজেই ৩২ বিঘা জমিটা দখল দিয়ে নিজেদের করে নিতে পারবে।
এজন্যেই তারা ২৭ জন প্রতিবেশীর নামে মামলা করেছিল নিজের মেয়ে হত্যা করে, যাতে ঐই পরিবারের সবার জেল হয়, এ স্বীকারোক্তি গুলো কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইন চার্জ মো. হাবিবুল্লাহ সংগ্রহ করেছেন এবং ভেরিফাই করে সত্যায়িত করেছেন। তাছাড়া মেয়েটাকে কিভাবে কিভাবে মারা হয়েছিল সে ঘটনার স্বীকারোক্তিও বাবা-মায়ের কাছ থেকেই পুলিশ নিয়েছে, জান্নাতি মেয়েটার বয়স খুব বেশি না, ১৫ বছর বয়স মাত্র। এইটুকু বয়সে মরতে হলো নিজের আপন মা-বাবার হাতে, ক্লাস নাইনে পড়তো মেয়েটি। গ্রামের সবাই এ ঘটনায় খুবই অবাক হয়েছে এবং মেয়েটার জন্যে শোকাহত হয়ে কেঁদে কেঁদে বলছিল- মেয়েটার আচার ব্যবহার খুবই ভালো ছিল, ভদ্র একটা মেয়ে ছিল, মেয়েটার স্কুলের শিক্ষক এবং সহপাঠীরাও জানিয়েছে- মেয়টা পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল, অনেক মেধাবী ছিল। বেঁচে থাকলে সামনের বছরই এসএসসি পরীক্ষা দিত, হয়তো ভালো একটা রেজাল্টও করতো,
আমাদের চারপাশে
কত-শত দম্পতির সন্তান হয়না বিধায় এ হসপিটাল থেকে ও হসপিটালে দৌড়া দৌড়ি করে দিন পার
করে। একটা সন্তানের জন্যে কত হাহাকার করে। অথচ সামান্য কিছু জমির জন্যে নিজ বাবা-মা
আর চাচির হাতেই খুন হতে হলো হাসিখুশি মেয়ে জান্নাতির। শুধু জম্ন দিলেই মা হওয়া যায়
না, বর্তমানে এই রকম জালিম মা-বাবার জন্য সমস্ত মা জাতির কলঙ্ক, হায়রে মানুষ হিংস্র
হায়েনা থেকেও খারপ হয়ে গেছে।
কোথায় আজ মানুষের বিবেক,
কোথায় আজ মানবতা।
ফজর | ৫.৩০ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৪ টা বিকাল |
মাগরিব | ৬ টা সন্ধ্যা |
এশা | ৭.৩০ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৪০ মিনিট দুপুর |